রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

কলকাতায় করোনায় বেশি মারা যাচ্ছে কেন?

কলকাতায় করোনায় বেশি মারা যাচ্ছে কেন?

সারা ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নিরিখে মৃত্যুর হারে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যে আবার সব জেলার মধ্যে এই মাপকাঠিতে সর্বাগ্রে আছে কলকাতা। মহানগরে কোভিডের এই দাপটের কারণ কী?

সুনির্দিষ্ট উত্তর পেতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স বা এনআইবিএমজি-র সঙ্গে যৌথ ভাবে গবেষণা করছে নাইসেড (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস)। নাইসেড-প্রধান শান্তা দত্ত রবিবার বলেন, ‘‘লকডাউন শুরুর পর থেকে এখানে ভাইরাসের অনেক মিউটেশন (রূপবদল) হয়েছে। অল্প সময়ে বহু মিউটেশনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।’’

আক্রান্ত এবং মৃত্যুর নিরিখে কলকাতায় করোনা সংক্রমণের যে-ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে, রবিবারেও তাতে ছেদ পড়েনি। এ দিন নতুন করে ১৫৩ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩৭ জন মহানগরীর বাসিন্দা। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মারা গিয়েছেন ১৪ জন। তাদের মধ্যে ১০ জনেরই বাড়ি কলকাতায়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটের তথ্যের নিরিখে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের ‘কেস ফেটালিটি রেট’ (সিএফআর) সর্বাধিক। এপিডিমিয়োলজিক মেথডে এ দিনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে সারা দেশের তুলনায় বঙ্গের কেস ফেটালিটি রেট দাঁড়ায় ৯.৫৪%। সেখানে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলির সিএফআর যথাক্রমে ৭.৮০, ৬.৭৭, ৪.০৭ এবং ০.৮৩%।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। সারি-রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না, সেটা বিচার্য। রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছেন কি না, তা-ও দেখতে হবে। কেন্দ্রীয় জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘‘ভাইরাসের চরিত্রের বদল ঘটছে কি না, দেখতে হবে সেটাও!’’

এই গবেষণাই করছে নাইসেড-এনআইবিএমজি। নাইসেড-প্রধান বলেন, ‘‘অল্প সময়ের মধ্যে অনেক মিউটেশন হলে তার প্রভাব বদলাবে ঠিকই। তবে সেই বদলের প্রভাব কতখানি মারাত্মক, আদৌ সংক্রমণ বৃদ্ধির সহায়ক কি না, এই সব বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। আরো গবেষণা প্রয়োজন।’’ শান্তাদেবী জানান, চিনের উহানে নোভেল করোনাভাইরাসের টাইপ বদলে ভাইরাসের যে-টাইপের দেখা সব চেয়ে বেশি মিলছে, তা হল, ‘A2a’। কলকাতায় ‘A2a’-এর পাশাপাশি ‘B’ ক্ল্যাডের কোভিড পাওয়া গিয়েছে।

ভাইরাসের মিউটেশন সংক্রান্ত গবেষণার দু’টি পর্যায়। প্রথম পর্যায়ে ভাইরাসের কী ধরনের মিউটেশন সক্রিয়, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন এনআইবিএমজি-র পার্থ মজুমদার ও নিধান বিশ্বাস। কলকাতায় ভাইরাসের যাত্রাপথ দ্বিতীয় পর্যায়ের গবেষণা বিষয়। এনআইবিএমজি-র অরিন্দম মৈত্র এই পর্যায়ে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘ভাইরাসের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কিছু বলার সময় আসেনি।’’

গবেষক নিধানবাবু জানান, উহানে করোনাভাইরাসের যে-টাইপ প্রথমে পাওয়া গিয়েছিল, তা ছিল ‘O’ টাইপ। জানুয়ারির শেষেই মূল টাইপ-সহ ১১টি ভাগে ভাগ হয়ে যায় কোভিড-১৯। প্রতি মাসে এই ভাইরাসের দু’‌টি-তিনটি মিউটেশন হয়ে চলেছে। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ‘A2a’ বেশি করে ছড়াতে থাকে।

নিধানবাবু জানান, ‘A2a’-তে স্পাইক প্রোটিনের একটি মিউটেশন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের মাথার উপরে ছুঁচলো অংশটিকে স্পাইক প্রোটিন বলে। ফুসফুসের কোষের সীমানায় এসিই২ নামে একটি প্রোটিন বসে থাকে, তার সঙ্গে চুম্বকের মতো আটকে যায় এই স্পাইক প্রোটিন। মানবদেহে এক ধরনের প্রোটিন কাঁচির মতো কাজ করে। স্পাইক প্রোটিন এসিই২-র উপরে বসার সঙ্গে সঙ্গে কাঁচির মতো কাজ করতে সক্ষম প্রোটিনটি স্পাইক প্রোটিনের মাথাটা একটু কেটে দেয়। তাতে দু’টি ভাইরাসকে জুড়ে দেওয়ার মতো একটি প্রোটিন বেরোয়। এ ভাবে মানুষের দেহে বংশ বাড়ায় ভাইরাস।’’

তবে মিউটেশন মানেই আতঙ্ক, এমন ভাবার কারণ নেই বলে জানান নিধানবাবু। ‘‘প্রতিটি মিউটেশনেই ভাইরাসের শক্তিক্ষয় হয়। ফলে মিউটেশন মানেই ক্ষতিকর, এমন নয়,’’ বলছেন ওই গবেষক। এআইবিএমজি-র গবেষক পার্থ মজুমদার জানান, ভাইরাসের চরিত্র বদলের সঙ্গে সংক্রমণের হার বা মৃত্যুর যোগ প্রমাণ করতে হলে রাজ্যে ক’জন সংক্রমিত, তার প্রকৃত চিত্র সামনে আসা উচিত। সেই জন্য পরীক্ষা আরও বাড়ানো উচিত। ‘‘এখানে পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে না! উপসর্গহীন সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা কত, তা না-জানলে কেস ফেটালিটি রেট বোঝা সম্ভব নয়। এখন রাজ্যের কেস ফেটালিটি নিয়ে যে-প্রচার হচ্ছে, সেটা সত্যি না-ও হতে পারে। তাই ভাইরাসের চরিত্রবদলের সঙ্গে সংক্রমণের হার বা মৃত্যুর সম্পর্ক আছে কি না, তা জানতে হলে কেস ফেটালিটি রেট যথাযথভাবে নির্ণয় করা উচিত,’’ বলেন পার্থবাবু।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877